সন্তানের মাথার ওপর বটবৃক্ষের মতো থাকেন বাবা। যার স্নেহ অবারিত ধারায় শুধুই সন্তানের জন্য। বাবা মানে নির্ভরতা, নিখাদ আশ্রয়। উত্তপ্ত সূর্যের তলে সন্তানের শীতল ছায়া। বাবা মানে ভরসা। আবার বাবা শাশ্বত, বাবা চির আপন। প্রতিবছর জুন মাসের তৃতীয় রোববার বিশ্বব্যাপী পালিত হয় বাবা দিবস। আজ বিশ্ব বাবা দিবস। এ উপলক্ষে বাবাকে নিয়ে  কথা বলেছেন কয়েকজন অভিনয়শিল্পী।

মেহজাবীন চৌধুরী
আব্বুর আচরণ আর মানসিকতার প্রভাবে আমরা ভাইবোনেরা খুব ইকুয়ালি বড় হয়েছি। আমাদের পরিবারে একটা জিনিস নেই সেটা হলো, জেলাসি চর্চা। আমরা সবাই খুব প্র্যাকটিক্যালি বড় হয়েছি। যার জন্য সবাই বয়সের চেয়ে একটু বেশি ম্যাচিউর। আমরা প্রত্যেকে প্রত্যেকের সঙ্গে আনন্দ, দুঃখ শেয়ার করতে পছন্দ করি। খুব ভালো বোঝাপড়া আমাদের আছে।

এই শিক্ষাটা আমাদের মধ্যে ভালোভাবেই এসেছে।আমি খুব অল্প বয়সে শোবিজে কাজ শুরু করি। তখন আমি ও লেভেল-এর স্টুডেন্ট। ওই বয়সে আমাদের দেশের মেয়েদেরকে এতটা সুযোগ, এতট স্বাধীনতা আসলে এখন পর্যন্তও দেওয়া হয় না। সেক্ষেত্রে আমার আব্বু আমাকে অনেক সুযোগ দিয়েছেন। আব্বু খুব সরল মনের মানুষ। মাঝে মধ্যে বলি, এত সরল হলে এখনকার দিনে চলা যায় না।

এটা হয়তোবা বলার সময় বলে ফেলি কিন্তু আমি মনে করি এটাই আব্বুর সবচেয়ে বড় গুণ। আমার ফ্রেন্ড সার্কেল থেকে শুরু করে আত্মীয়-স্বজন যারাই আব্বুকে কাছ থেকে দেখেছেন তারাই বলেন, তোমার আব্বু খুব সরল মানুষ। এই কথাগুলো শুনতে ভালো লাগে। আব্বুর কাজকর্ম ও চিন্তা-ভাবনার মধ্যে এত বেশি সিম্পিলিসিটি এই জিনিসটাই খুব ভালো লাগে। মানুষকে তার মতো করে চলতে দেওয়ার দারুণ মানসিকতা রয়েছে আব্বুর।

সাবিলা নূর
২০১০ সালে একটি ফটোশুটের মাধ্যমে শোবিজ অঙ্গনে কাজ শুরু করি। আব্বু শুরুতে আমার কাজটি খুব একটা সাপোর্ট করেননি। আব্বু মনে করতেন, তখন আমার কাজ করার বয়স হয়নি। আমি তখন ক্লাস এইটে পড়ি। স্কুলের পড়াশোনা কেমন হবে, কি হবে-সেটা নিয়ে আব্বুর খুব টেনশন ছিল। ধীরে ধীরে যেটা হয়েছে আব্বু অনেকটা সাপোর্ট দিতে শুরু করেন।

আমাদের আব্বুরা হয়তো খুব সামনাসামনি সাপোর্ট করেন না। হয়তো সামনে এসে বলবেন না যে, তোমার কাজ খুব ভালো লেগেছে। কিন্তু আব্বুর সাপোর্টটা বুঝতে পারি যখন দেখি, আমার কোনো নাটক নিজে মনোযোগ দিয়ে দেখছেন আবার অন্য অনেককে নাটকটি দেখার জন্য ফোন করে বলছেন। অনেক সময় অনেক রিউমার ছড়িয়েছে। সেই সময় আব্বুর কাছ থেকে যে সাপোর্ট পেয়েছি তাহলো—আব্বু আমার কথায় বিশ্বাস করেছেন।

পেপারে কি আসছে, কে কি বলছে তার থেকেও বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন আমি কি বলছি সে কথায়। আব্বু পরিস্থিতি খুব বিবেচনায় নিতে পারেন, আমি কোন সময় কোন পরিস্থিতিতে আছি সেই জিনিসটাতে তিনি খুব প্রায়োরিটি দিয়েছেন। সেইটা আমার ক্ষেত্রে একটা মোরাল সাপোর্ট হিসেবে কাজ করেছে। আব্বুর একটু সাপোর্ট অনেকের নেগেটিভ কথাকে অগ্রাহ্য করার শক্তি জুগিয়েছে।

মারিয়া নূর
ছোটবেলায় আব্বুর সঙ্গে আমি আর আমার ছোট বোন প্রতিদিন সকালে সংসদ ভবন যেতাম। কারণ প্রতিদিন আমাদের হাঁটার নিয়ম ছিল। মেয়ে কাঁধে নিয়ে ঘোরার গল্প আমরা নাটক-সিনেমায় যে রকম দেখেছি, আব্বু ঠিক সে রকম করেই আমাকে কাঁধে নিয়ে ঘুরতেন।

চিপস আর আইসক্রিম খাওয়ার যত আবদার, সব মেটাত আব্বু। আর যখন স্কুলে যাওয়া শুরু করলাম, আব্বুর কাছে প্রতিদিন সন্ধ্যায় নিয়ম করে পড়তে বসতাম। আব্বু গণিতে খুব ভালো। আর হাতের লেখাও অসম্ভব সুন্দর। পড়তে বসা মানেই ছিল অঙ্ক করা আর হাতের লেখা কেন সুন্দর হচ্ছে না, তা নিয়ে কথা শোনা।

দুষ্টু ছিলাম, তাই চেষ্টা করতাম কীভাবে সন্ধ্যার পড়াটা ফাঁকি দিয়ে টিভির সামনে বসা যায়। আর এখন বড় হওয়ার পর মনে হয়, সে রকম সময় যদি আবার কাটানো যেত! অনেক মিস করি আব্বুর সঙ্গে কাটানো মুহূর্তগুলো!